একাডেমিক এরিয়ায় এমন একটা কথা প্রচলিত আছে যে পিএইচডি’র জন্যে নাম লেখানো আর জেনেশুনে সেচ্ছায় বিষ পানের প্রস্তুতি নেওয়া দুটোই সমান যন্ত্রণাদায়ক। আর সুপারভাইজার যদি কোন কারণে কর্তৃত্ত্বপরায়ণ হয়ে হয়ে থাকে তাহলে জীবন সোনায় সোহাগা! মনে হবে যেন হাবিয়া দোজখের আগুনে স্বেচ্ছায় জ্বলেপুড়ে মরছেন। এই কথাগুলোর মর্ম শুধু ভুক্তভোগীরাই বুঝতে পারবেন।

অন্যদিকে সুপারভাইজার যদি সর্বদা ডমিনেট না করে, বসের মতো আচরণ না করে বরং একজন লিডারের মত ব্যবহার করে, তখন সব কিছুই সহজ হয়ে যায়। এই অতিরিক্ত চাপগুলি কখনো চাপ বলে মনে হয় না। বরং এই যে বারতি কাজের চাপ সেটাকে উল্টো উপভোগ করা যায়। উপরওয়ালার মেহেরবানীতে আমি সেরকম দুজন সুপারভাইজার পেয়েছি যারা জন্মসূত্রে একজন আমেরিকান এবং আরেকজন ব্রাজিলের নাগরিক। আমার প্রোগ্রাম শুরু করা থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত আমার একবারের জন্যেও মনে হয়নি যে তারা আমার বস আর আমি তাদের অধীনে কাজ করছি। বরং সবসময় এটাই মনে হয়েছে যা আমরা সহকর্মী। তারা কখনোই অতিরিক্ত কাজের বোঝা চাপিয়ে দেয়নি। কোভিডের সময় যখন ট্রাভেল করতে পারছিলাম না, প্রোগ্রাম ডিফার করতে হচ্ছিল বারবার সেটাও তারা দায়িত্ব মনে করেই ডিপার্টমেন্টের সাথে নেগোশিয়েট করেছেন। মাঝে কিছু হেলথ ইস্যু সৃষ্টি হলেও তাদের সাপোর্ট পেয়েছি। অবশ্য পরবর্তীতে আমি সেই গ্যাপ্টা এক্সট্রা এফোর্ট দিয়ে পূরণ করেছি। কিন্তু সেটা নিজ উদ্যোগেই করেছি, কোন চাঁপে পরে না। তাদের কাছ থেকে আমি সবসময়ই বন্ধুসুলভ আচরণ পেয়ে এসেছি। তার মানে এই না যে আমরা ইয়ারি দোস্ত হয়ে গিয়েছি। বরং শিক্ষক হিসবে যেই শ্রদ্ধাটুকু তাদের প্রাপ্য সেটা তারা সবসময়েই পেয়ে এসেছেন।

সাধারণত বসরা কখনো তাদের অধস্তনদের বিরুদ্ধ মত স্বাভাবিক চোখে নিতে পারে না। কিন্তু আমি তাদেরকে কখনো সেটা করতে দেখিনি। বরং আমি যদি আমার যুক্তি দিয়ে সেটা বোঝাতে পেরেছি যে তাদের মতামতটি যুক্তিযুক্ত নয় তাহলে সেটা তারা খুশীমনে গ্রহণ করেছেন। এবং একই ভাবে আমার নিজের কোন ধারণা ভুল হলেও সেটা সম্পূর্ণ শুনে তারপর ব্যাখ্যা করেছেন আসলে সেটা কেন গ্রহণযোগ্য। এই ব্যাপারগুলি আমি এর আগে খুব একটা পাইনি। বরং উল্টোটা পেয়ে এসেছি অনেক ক্ষেত্রে।

কিন্তু আমার এবারের অভিজ্ঞতা পুরো উল্টো। আমি এজন্য নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। পিএইচডির কাজ যখন শুরু করি তখন কখনো ভাবিনি যে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির প্রফেসরের সাথে আমার পিএইচডি কাজের কোলাবোরেশান করতে পারব। কিন্তু আজ সেটা সম্ভব হয়েছে। আর এর কৃতিত্ব তাদেরই প্রাপ্য।

শুধু তাই না, পিএইচডি প্রথম বর্ষে পরবর্তীতে ক্যারিয়ার গাইডলাইন পাওয়ার সৌভাগ্য সবার হয়না। আল্লাহর অশেষ রহমতে সেই ভাগ্যবানদের একজন। যে কিনা পরবর্তীতে কোন পথে হাটলে কোন ক্যারিয়ারে সফল হওয়া যেতে পারে সেই দিকনির্দেশনা পাচ্ছি।

এই লেখাটা পড়লে পরে আমার সুপারভাইজার দুজনেই খুব খুশী হবে এটা হলফ করে বলতে পারি। আর ফেইসবুকে এই লেখা শেয়ার করার কারণ হচ্ছে তারা দুজনের কেউই ফেইসবুক চালান না। তবে টুইটার আর লিংকডইনে তারা আমার আইডির সাথে যুক্ত আছেন। আজ থেকে তিন বছর পর তাদের সাথে এই লেখা শেয়ার করব। সেদিন তাদের প্রতিক্রিয়া দেখার অপেক্ষায় আছি।

এই লেখাগুলো আজ লেখার বিশেষ কিছু কারণ রয়েছে। আর সঙ্গত কারণেই সেই কারণটা লিখতে পারছি না। আর আমি চাই যারা পিএইচডি প্রোগ্রামের জন্যে এনরোল হবেন তারা যেন বোঝার চেষ্টা করেন যাদের সুপারভাইজার হিসেবে বাছাই করছেন তারা মানুষ হিসেবে কেমন। মানুষ হিসবে যদি তারা ভালো হয়ে থাকেন, তাহলে দেখবেন যে আপনার কিংবা আপনাদের কাজ অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে।

পুনশ্চঃ উচ্চশিক্ষা ও শিক্ষাবৃত্তি সংক্রান্ত বিষয়ে আমি নিয়মিত Global Scholarship Opportunities এই গ্রুপে পোস্ট করে থাকি। আপনারা ইচ্ছে করলে এখানে জয়েন করতে পারেন। ধন্যবাদ।

ধন্যবাদ!

মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান (অপু)
পিএইচডি রিসার্চার,
ফুড সিকিউরিটি ফর ইকুইটেবল ফিউচার রিসার্চ গ্রুপ,
ডিপার্টমেন্ট অফ সোশিওলজি,
ল্যাংকেস্টার ইউনিভার্সিটি,
ল্যাংকেস্টার, ইউকে।

Tags:

Leave a Reply