AD Scientific Ranking

বঙ্গদেশের জ্ঞানীগুণী শিক্ষক-গবেষক মহল সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একটা নতুন স্ক্যামের পেছনে ছোটা শুরু করেছেন। আর এটা হলো বিশ্বসেরা গবেষক হওয়ার স্ক্যাম। এটা তারা বুঝে করছেন নাকি না বুঝে করছেন সেটা জানি না।

এক সময় তারা প্রিডেটরি জার্ণাল ‘সায়েন্স পিজি’র মতো ভুয়া আর ভোগাস পাবলিশারের পেছনে মাত্র ২-৩ হাজার টাকা ব্যয় করে পাবলিকেশন করে নিজের কর্মস্থলে প্রমোশন স্ক্যামে ভুগেছেন।

আর এখন আবার নাম লিখিয়েছেন “এডি সায়েন্টিফিক ইনডেক্স” (AD Scientific Index) নামক র‍্যাংকিং স্ক্যামের পাশে। বিশ্বসেরার খাতায় নাম ওঠার সুখে সবাই আত্মহারা হয়ে গেছেন। কয়েকজন কয়েক পা বাড়িয়ে অনলাইন সাংবাদিক ডেকে নিউজ করে তা প্রচার প্রচারণা করার ব্যবস্থাও করেছেন কিছু পয়সা পাতি খরচ করে। কি সেলুকাস!

আমি ছোট মানুষ এই ব্যপারটি ধরতে পারছি তারা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বসেরা হয়েও কেন ধরতে পারছেন না তা বোধগম্য না। আমি আমার পরিচিত রিসার্চ এরিনায় যাদের ফলো করি এবং যারা তাদের কাজ দিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত তাদের কখনো এই স্ক্যাম র‍্যাংকিংকে প্রমোট করতে দেখিনি।

তারা একটা স্ক্যামকে প্রমোট করে জুনিয়র শিক্ষার্থীদের যে একটা ভুল বার্তা দিচ্ছেন এই ব্যপারটি কি বুঝতে পারছেন? এই সস্তা প্রচারণার কি তাদের আদৌ কোন প্রয়োজন ছিল?

হ্যাঁ একটা প্রয়োজন অবশ্যই ছিল। কারণ এদেশের সাধারণ মানুষ কিংবা শিক্ষার্থীরা এইসব সায়েন্টিফিক কিংবা একাডেমিক ইনডেক্স নিয়ে খুব একটা ধারণা রাখে না। তাই সহজে তাদের মোগজ ধোলাই করা যায়। আর নিজের অবস্থানটাও একটু উঁচুতে নেওয়া যায়। কিন্তু বিশ্বাস করেন রাসেল ভাই(!), বাইরের সায়েন্টিফিক কমিউনিটিতে এর দুপয়সা মূল্য নাই। এইগুলা শুধুই আবর্জনা ছাড়া কিছুই না।

হয়তো আগের ‘সায়েন্স পিজি (Science PG)’ এর আধুনিক ভার্সন (ভোগাস) AD Scientific Index ব্যবহার করে নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রমোশন ও আনুষঙ্গিক সুযোগ সুবিধা নিয়ে নেবেন।

এই ইনডেক্সের যাত্রা শুরু তুরস্কে। সেখানকার দুই বিশ্ববিদ্যালয় প্রফেসর এটি শুরু করেন। কারণ তারা ভালো করেই জানেন যে, এটা দিয়ে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে মেধাবী(!) দের কাছ থেকে দুপয়সা আদায় করে নেওয়া যাবে এই দিয়ে। মুসলিম দেশে উদ্ভব এই ভেবে অনেকে গর্ব করতে পারেন। তবে এটা হবে বাটপারির জন্যে গর্ব করা।

এই ইনডেক্সে নাম তুলতে চাইলে আপনি উন্নত দেশের হলে খরচ করতে হবে মাত্র ৩০ ইউএস ডলার। আর আমার মত উন্নয়নশীল দেশের হলে বিশেষ ছাড় পেয়ে সেটা হবে বাংলালিংক দামে ২৪ ইউএস ডলার।

অন্যদিকে প্রতিষ্ঠান হিসেবে নাম তুলতে চাইলে সেই ব্যবস্থাও আছে। এবং এর জন্যে বিশেষ মূল্যছাড়ও রয়েছে!

বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত র‍্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলি যেমন স্কুপাস, টাইমস হায়ার এডুকেশন, কিউএস, ওয়েব ওফ সায়েন্স ইত্যাদি তাদের তালিকায় নাম তুলতে অর্থ দাবী করে না। কারণ তারা এটাকে শুধু অর্থ আদায়ের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে না। বরং বিজ্ঞান ও গবেষণার একটি প্রকৃত এবং স্বীকৃত ইনডেক্স হিসেবেই দেখে থাকে।

তাদের ওয়েবসাইটে, তারা দাবী করেছে যে তারা এই র‍্যাংকিং করতে গুগল স্কলার এর তথ্য উপাত্ত ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু এই পদ্ধতির পুরো বিষয়টি স্পষ্ট নয়। তদুপরি এই পদ্ধতি কোন পিয়ার রিভিউ প্রসেসের মধ্য দিয়ে যায় নি।

তাই যারা এই স্ক্যাম র‍্যাংকিং এ নিজের নাম দেখে উচ্ছাসের জোয়ারে ভেসে যাচ্ছেন তারা সময় থাকতে লাইনে আসুন। আর প্রমোশন সাইটেশন বোদ্ধারাও আপনার অধস্তনদের মিথ্যা এবং ভুল পথে পরিচালিত করা থেকে দূরে থাকুন।

উচ্চশিক্ষা ও শিক্ষাবৃত্তি সংক্রান্ত বিষয়ে আমি নিয়মিত Global Scholarship Opportunities এই গ্রুপে পোস্ট করে থাকি। আপনারা ইচ্ছে করলে এখানে জয়েন করতে পারেন।

ধন্যবাদ!

মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান (অপু)

পিএইচডি রিসার্চার,

ফুড সিকিউরিটি ফর ইকুইটেবল ফিউচার রিসার্চ গ্রুপ,

ডিপার্টমেন্ট অফ সোশিওলজি,

ল্যাংকেস্টার ইউনিভার্সিটি,

ল্যাংকেস্টার, ইউকে।

Tags:

Leave a Reply